আরসার দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী আটক, টর্চার সেলের সন্ধান
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩,
উখিয়ায় থেকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসী ওলামা বডির হেড ওসমান ওরফে সালমান মুরব্বিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ ছাড়া সাধারণ নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের টর্চার সেলেরও সন্ধান পেয়েছে র্যাব।
|আরও খবর
হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
হত্যা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার
উখিয়ায় ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা নারী আটক
গ্রেপ্তারকৃত ওসমানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরসার আরেক নেতা মো. ইউনুসকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আরসা নেতা আতাউল্লাহর নির্দেশে ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় এই টর্চার সেল গড়ে তোলা হয়।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় র্যাব-১৫ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারকৃত ওসমান মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে এবং মো. ইউনুস সৈয়দ হোসেনের ছেলে।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১টি ৯ এমএম বিদেশি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি, ৪টি একনলা ওয়ান শুটার গান, ২টি এলজি, ৫ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ এবং বিপুল পরিমাণ টর্চার সেলের সরঞ্জামাদির মধ্যে ১টি কুড়াল, ৩টি বিভিন্ন সাইজের প্লাস, ১টি কাঠের লাঠি, ১টি স্টিলের লাঠি, ১টি করাত, ১টি নাম চাকু, ১টি লোহার রড, ১টি লোহার দা, ১টি হ্যাংগিং হুক, ১টি সিসর, ৪টি তালা, ৩টি বড় লোহার পেরেক, ২টি লোহার শিকল, ১টি রশি, ১টি কুপি বাতি এবং সুইসহ সুতার ১টি বান্ডেল।
র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষনেতা ওসমান ও তার সহযোগী ইউনুসকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওসমানের দেয়া তথ্যে আরসার টর্চার সেলের সন্ধান পায় র্যাব। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হলেন ওসমান। এসময় টর্চার সেল থেকে সাধারণ নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে নির্যাতনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে আরসা সংগঠনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। সালমান মুরব্বী ২০১৮ সালে আরসাতে যোগদান করে ক্যাম্প-১৩ এর দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে তিনি সংগঠনটির জিম্মাদার ও পরবর্তীতে হেড জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই ক্যাম্পে তিনি একটি ‘দাওয়াতি শাখা’র নেতৃত্ব দেন। যেটি রোহিঙ্গা তরুণদের প্রলোভন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আরসাতে যোগদানে বাধ্য করে। তার নির্দেশনায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে আরসায় যোগদান করায়। খরচ চালানোর জন্য আরসার সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে অর্থ আনতেন সালমান মুরব্বি। পরে ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে সেই অর্থ ভাগ করে দিতেন। পরে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ ও খালেদের নির্দেশনায় যা যা কাজ করার তা করা হতো।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এই সংগঠনে যোগদান করার জন্য লোকজনকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো। এবং যারা আরসা সংগঠনের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে বেরিয়ে যেতে চাইতো তাদেরও টর্চার সেলটিতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হতো। লোকজনকে অপহরণ করে সেই টর্চার সেলে বেঁধে রেখে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। এসবের প্রধান নেতৃত্বে থাকার কারণে আরসা সদস্যরা ওসমানকে সালমান মুরব্বি হিসেবে আখ্যায়িত করে। সম্প্রতি ক্যাম্পে ও আশেপাশের এলাকায় খুন, গুম, অপহরণসহ যত ধরনের খারাপ কার্যক্রম সবকিছু সালমান মুরব্বির নেতৃত্বে হচ্ছে। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ ও খালেদের সঙ্গে সমন্বয় করে অস্ত্র সংগ্রহ, সরবরাহসহ সবকিছু করতেন তিনি। এই সালমান মুরব্বি ডিজিএফআই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত ও উপস্থিত ছিলেন। তার নামে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে।
চলতি বছরে র্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে ৭৩ জন আরসা সদস্যকে আইনের আওতায় এনেছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ যেকোন এলাকায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।