একটি বুলেটই সারা জীবনের পঙ্গু করে দিল নির্মাণ শ্রমিক মিলনকে
মোঃ লিটন মিয়া
একজনের কাছে টাকা পাবো, সেটা আনতে যাচ্ছি। তুমি ঠিকমতো থেকো। খাওয়া দাওয়া করিও। স্ত্রীকে এই কথা বলে বাসা থেকে সুস্থ শরীরে বেরিয়ে যান নির্মাণ শ্রমিক মো: মিলন। বের হয়ে তিনি সরাসরি যোগ দেন যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। কিন্তু হঠাৎ একটি বুলেট তার বাঁ পায়ের হাটু ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মিলন।
মো: মিলন (৩২)। কাজ করতেন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে। থাকেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইলের স্বপন মৃধা রোডের, বাইতুস সালাম জামে মসজিদ এলাকার ৪০৬/১ নম্বর বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার চানপুরা গ্রামে। স্ত্রী, আট বছরের এক মেয়ে নিয়ে মাতুয়াইলে এক কক্ষ নিয়ে থাকেন মিলন। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে একটু ভালোই চলছিল মিলনের সংসার। কিন্তু কয়েক মাস যাবত পঙ্গুত্ববরণ করে কাজ করতে না পারায় খুবই মানবিক জীবন যাপন করতে হচ্ছে মিলনের পুরো পরিবারকে। স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল মিলনের। নিয়মিত বেতন দিতে না পারায় মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে সন্তানের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
মিলনের স্ত্রী লাকি বেগম জানান, গত ২০ জুলাই শনিবার দুপুরে আমাকে একজনের কাছে টাকা পাবো। সেটা আনতে যাচ্ছি বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান মিলন। তখন আমি বলি বাইরের অবস্থা ভালো না। আমি যেতে নিষেধ করি। কিন্তু সে কথা না শুনে আসতেছি বলে বেরিয়ে যায়।
এর প্রায় ঘন্টাখানেক পরে আমার ভাসুর আমাকে ফোন দিয়ে জানায় মিলন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তখন আমি আমার খালু শ্বশুরকে ফোন দিলে সে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসছি। এরপর চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় আনা হয়।
লাকি বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে আরও বলেন, এখন আমার স্বামী কয়েক মাস যাবত কোন কাজ করতে পারে না। ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে এক বেলা খাইতো, আরেক বেলা না খেয়ে থাকি। অবস্থা বেগতিক দেখে গত কয়েক মাস যাবত আমি একটি সমিতিতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করি। সামান্য বেতন পাই। এই বেতন দিয়ে ঘর ভাড়া, সংসার চালানো ও স্বামীর দামি দামি ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না। এদিকে মাদ্রাসার বেতন দিতে না পারায় মেয়েটার লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে পঙ্গু মিলন বলেন, আমি তো দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়েছিলাম। গুলিতে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। হাঁটতে পারিনা। কিন্তু কেউ কোন খবর নেয়নি। কেউ সাহায্য সহযোগিতার হাতও বাড়ায়নি। এখন আমি টাকার অভাবে ওষুধ খাইতে পারিনা। কবে থেকে কাজ করতে পারব, তাও বলতে পারছি না। ফলে পরিবারের স্ত্রী ও ছোট মেয়েটা নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। মানবের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এখন আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সাহায্য সহযোগিতার জন্য বিনীত প্রার্থনা করছি। আমি এর বিচার চাই।