মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজের লিজ গ্রহণ ও রি-ডেলিভারি পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক এমডিসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১৫ মে) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে দুদকের উপপরিচালক আনোয়ারুল হক চার্জশিট দাখিল করেন।
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিমানের মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। নতুন চার্জশিটে এদের মধ্যে থেকে ১৪ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর নতুন করে সাতজনকে আসামি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন জন স্টিল, সাবেক পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনস ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক (মো. এসএ সিদ্দিক), সার্ভিসেস অ্যান্ড অডিটের সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার দেবেশ চৌধুরী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম ভূইয়া, প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (স্ট্রাকচার) শরীফ রুহুল কুদ্দুস, সাবেক উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, সাবেক ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহিদ হোসেন, প্রকৌশলী কর্মকর্তা হীরালাল চক্রবর্তী ও মো. লুৎফর রহমান এবং প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার অশোক কুমার সর্দার।
এছাড়া, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (এওসি-এয়ারওয়ার্দিনেস) মোহাম্মদ সফিউল আজম, সহকারী পরিচালক (অ্যারোস্পেস/এভিয়নিক্স) দেওয়ান রাশেদ উদ্দিন, উপপরিচালক মো. আব্দুল কাদির ও এয়ারওয়ার্থনেস কনসালট্যান্ট গোলাম সারওয়ারকেও আসামি করা হয়েছে।
যে ১৪ জনকে আসামির তালিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুর রহমান ফারুকী, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, উপ-মহাব্যবস্থাপক জিয়া আহমেদ, সাবেক চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজাদ রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক (শাহিন), ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা ও সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার গাজী মাহমুদ ইকবাল।
দুদকের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়েছিল বিমান। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরও একটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও।
উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারী কোম্পানি- উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। দুটি উড়োজাহাজের জন্য ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা করে ভর্তুকি ক্ষতি হয় রাষ্ট্রের।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।
মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রধান কার্যালয়ে ২০২২ সালের ১ জুন অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক। দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ওই অভিযান চালানো হয়।
জানা যায়, ইজিপ্ট এয়ারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে ১০ কোটি করে বছরে ১২০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে বিমানকে। লিজ চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যাত্রী পরিবহন করুক আর না করুক প্রতি মাসে উড়োজাহাজপ্রতি ৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। পাঁচ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করা যাবে না এবং লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দুটি আগের অবস্থায় ফেরত দিতে হবে।